রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। অঘোষিত লকডাউনের কারণে কর্মহীন ও গৃহবন্দি শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে এখন খাবারের সংকট। আর এমন সংকটের মধ্যেও হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারের খাদ্য সহায়তার চাল নিয়ে চলছে নানা চালবাজি। এসব চাল কালোবাজারে বিক্রি, অবৈধভাবে মজুত করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৬ জেলায় ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গোবিন্দগঞ্জে ১৮ বস্তা চাল উদ্ধার, আটক ৩ : গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অন্যত্র পাচার করার সময় ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির ১৮ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের কোগাড়িয়া এলাকা থেকে বৈরাগীহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ এসব চাল উদ্ধার করে।
জানা গেছে, স্থানীয় চালের ডিলার জাহিদুল ইসলামের গোডাউন থেকে অটোভ্যানে চালগুলো অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ দেখে এক ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ হলে তারা প্রতিটি ৩০ কেজি হিসেবে ১৮ বস্তা চালসহ অটোচালক জাহিদুল ইসলাম (৪৫)কে আটক করে। পরবর্তীতে বৈরাগীহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে এসে ডিলার জাহিদুল ইসলাম (৪২)কে জিজ্ঞাসাবাদ করো হলে সঠিক উত্তর দিতে না পারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার ভূমি নাজির হোসেন ডিলার জাহিদুল ইসলামকেও আটকের নির্দেশ দেন।
এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কোগাড়িয়া এলাকা দুদু মিয়ার পুত্র ভুট্টু মিয়া (৩০)কে আটক করেছে। বৈরাগীহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মিলন চ্যাটার্জী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফটিকছড়িতে খোলা বাজারে সরকারি
চাল বিক্রি, ডিলারসহ গ্রেপ্তার তিন
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে সরকারের ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) চাল অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রিকালে সরোয়ার জাহান বাবুল নামে এক ডিলারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ধর্মপুর আজাদী বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ১২০ কেজি সরকারি ওএমএসের চাল উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, শুক্রবার সকালে কার্ডধারী নয় এরকম লোকের কাছে (ওএমএস)’র চাল বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন। পরে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিলার সরোয়ার জাহান বাবুলসহ আরও দুইজনকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্র্রেপ্তার করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন জানান, ওএমএসের চাল অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রির অপরাধে ডিলারসহ আটক তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডিলার প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
গৌরীপুরে ডিলারসহ গ্রেপ্তার ৩
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৭০ কেজি চাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর, গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন, সাব ইন্সপেক্টর মো. মাইনুল রেজা। এ ঘটনায় গৌরীপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপস্নব কুমার সরকার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার গৌরীপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন ১৭০ কেজি চাল বোকাইনগর ইউনিয়নের কালিবাড়ীর মো. রফিক মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া (২০) ও লুটন রাজবরের ছেলে মহেশ রাজবর (৪৫) নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন খান তাদের চালের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওরা দু’জন জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার কালীপুর মধ্যম তরফের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান শাহিন (৪৫) ও বোকাইনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বালুচড়া গ্রামের আবু সাঈদ সাহেদের ছেলে মো. স্বপন মিয়ার কাছ থেকে কিনে এনেছে। এরপর পরেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডিলার শাহীন, রফিক ও মহেষকে গ্রেপ্তার করে।
তারাকান্দায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের
হেফাজত থেকে ৮০০ কেজি চাল উদ্ধার
তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের তারাকান্দায় অতি দরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৮০০ কেজি চাল জব্দ করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের কাছারি বাজারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ওএমএস ডিলার আব্দুর রহমানের সহযোগী এমদাদুল হকের দোকান থেকে এ চাল উদ্ধার করা হয়।
তারাকান্দা থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধভাবে মজুত করা চালগুলো জব্দ করা হয়। চালগুলো ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার, উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানের কাছ থেকে দোকান মালিক এমদাদুল হক নেয় বলে পুলিশের কাছে জানায়। এ অনিয়মের সঙ্গে ডিলারের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
লোহাগড়ায় ৩ জনের জেল-জরিমানাসহ
ডিলারের নামে মামলা
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সেই চাল কেনার অভিযোগে নড়াইলের লোহাগড়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় তিনজনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা ও চাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জানা গেছে, উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চালের ডিলার আশরাফ আলী মরণমোড়ের দোকানঘর থেকে বুধবার দুপুরে পার্শ্ববর্তী বাবরা গ্রামের ভ্যানচালক শহীদ খাঁর কাছে ১৫০০ টাকায় ৫০ কেজি চাল বিক্রি করেন। শহীদ ওই চাল আড়পাড়া গ্রামের জবদুল জমাদ্দার ও একই গ্রামের রজিবর শেখের কাছে অধিক লাভে বিক্রি করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট রাখী ব্যানার্জির নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল ওই দিন রাত ৮টায় অভিযান চালিয়ে কালোবাজারে বিক্রীত ৫০ কেজি চাল জব্দ করে অভিযুক্ত ৩ জনকে আটক করেন। এ সময় ডিলার আশরাফ আলী কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শহীদ খাঁকে ৩ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং চাল কেনার অপরাধে অপর অভিযুক্ত জবদুল জমাদ্দার ও রজিবর শেখকে পৃথকভাবে ২৫শ টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখী ব্যানার্জি বলেন, পলাতক ডিলার আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের ও চাল কেনার অপরাধে তিনজনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, অভিযুক্ত ডিলার আশরাফ আলী উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চর আড়িয়ারা গ্রামের মৃত হেদায়েত আলীর ছেলে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য।
নবীগঞ্জে বিপুল পরিমাণ টিসিবি
পণ্য উদ্ধার, আটক ৫
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী স্থানীয় লালাপুর গ্রামের হাজী হেলিম উদ্দিনের পুত্র যুবলীগ নেতা নোমান হোসেন অবৈধভাবে টিসিবি সোয়াবিন তেলসহ পণ্যসামগ্রী পাইকারি ও খুচরা কালোবাজারে বিক্রি করার অভিযোগে তার ভাইসহ ৫ জনকে আটক করে প্রশাসন।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা ও জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে একটানা ৫ ঘণ্টাব্যাপী যৌথভাবে কয়েকটি গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ টিসিবির সোয়াবিন তেল চিনিসহ পণ্যসামগ্রী উদ্ধার করেন। অভিযানে অংশ নেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল, নবীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমান, জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসির আরাফাত, জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার চৌধুরীসহ দুই থানার একদল পুলিশ।
এ সময় নোমান হোসেনের ভাইসহ পাঁচজনকে আটক করে প্রশাসন। পরে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ আটককৃতদের জগন্নাথপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। অভিযানের খবর পেয়ে সুচতুর নোমান হোসেন পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা কালোবাজারি ব্যবসায়ী নোমান হোসেনকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আটককৃতরা হলো নোমানের ছোট ভাই আমান হোসেন (৩০), কর্মচারী জগন্নাথপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের নিতেশ রায়ের পুত্র লিংকন রায় (৩০), নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের তপথিবাগ গ্রামের ছমেদ মিয়ার পুত্র সিরাজ মিয়া (৪০), একই গ্রামের শফিক উদ্দিনের পুত্র আব্দুল কালাম (৩২), বটপাড়া গ্রামের কুতুব উদ্দিনের পুত্র আবুল কালাম (৪২)।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।